সর্বশেষ :
সিলেটে বিএনপি নেতার প্রাইভেট কার ছিনতাই লামাকাজী ইউনিয়ন জামায়াতের কমিটি গঠন টাকার জন্য কোন শিক্ষাথীর্র পড়ালেখা বন্ধ হবে না: বিশ্বনাথে মিছবাহ উদ্দিন হবিগঞ্জে ব্যারিস্টার সুমনকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ, আদালতে কাঁদলেন সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা গোয়াইনঘাটে ব্যবসায়ী সেলিম হত্যা মামলা, হবিগঞ্জ থেকে আটক ২ খালেদা জিয়াকে সেনাকুঞ্জে আনতে পেরে আমরা গর্বিত : প্রধান উপদেষ্টা (ভিডিওসহ) সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলা : থানায় অভিযোগ দায়ের সিলেট কাস্টমস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ভূমি দখলের অভিযোগ সিলেট সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ৭০ লক্ষ টাকার চোরাই পণ্য আটক
সিলেটে ক্ষোভ থেকে খুন করা হয় মুনতাহাকে

সিলেটে ক্ষোভ থেকে খুন করা হয় মুনতাহাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে কানাইঘাটের শিশু মুনতাহাকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘ঘাতক’ মার্জিয়া। টানা ৫ দিনের রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে এ তথ্য জানিয়েছে। মুনতাহাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় সে। গতকাল মুনতাহা খুনের ঘটনায় জড়িত মার্জিয়া ও তার মা আলিফজান বিবি সহ পাঁচদিনের রিমান্ডে থাকা ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরমধ্যে মার্জিয়া পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খুনের ঘটনা ও কারণ স্বীকার করলেও আদালতে এসে স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকার জানায়। এ কারণে আদালত ওই চার আসামিকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কানাইঘাট থানার এসআই শামসুল আরেফিন বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন; উপজেলার বীরদল গ্রামের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন হত্যা ঘটনা একটি আলোচিত ঘটনা।

এ কারণে আদালত থেকে ৫ দিনের রিমান্ডে এনে আসামিদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে মার্জিয়া খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। তবে, কী কারণে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে সেটি নিয়ে একেক সময় একেক বক্তব্য দিয়েছে। তার বক্তব্যের উপসংহারে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তিনি জানান- ধারণা করা হচ্ছে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে হত্যা করা হয়েছে মুনতাহাকে। বাড়ির বাইরে মুনতাহাকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার পিতা শামীম আহমদ নিষেধ করেন। এর আগে পারিবারিক বিরোধে মার্জিয়ার নানির গায়েও হাত তোলা হয়। একই ভাবে দেয়া হয় চুরির অপবাদও।

তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন- এসব কারণে একটি শিশুকে হত্যা করা না-ও হতে পারে। বিষয়টির আরও তদন্ত প্রয়োজন। রিমান্ডে পাওয়া তথ্য সহ সার্বিক বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হবে। এরপর আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে। সূত্র জানায়, মুনতাহা হত্যা মামলার চার আসামি কানাইঘাট থানার বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার স্ত্রী আলিফজান, তাদের মেয়ে শামীমা বেগম মার্জিয়া, একই এলাকার ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগমকে পুলিশ ১১ই নভেম্বর আদালতে প্রেরণ করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত সে সময় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে পুলিশ আসামিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদকালে প্রধান অভিযুক্ত মার্জিয়া নিজের দোষ স্বীকার করে এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিবে বলে পুলিশকে জানায়। তাই রিমান্ডের ৫ দিন শেষে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৪ আসামিকে আদালতে তোলা হয়। কিন্তু আদালতে এসে আর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি তিনি। পরে আসামিদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত। সিলেট জেলা জজ আদালতের ইন্সপেক্টর জমসেদ আহমদ জানিয়েছেন- চার আসামিকে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছেন।

তিনি বলেন- প্রয়োজন মনে করলে পুলিশ আবার তাদের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করবে। গত ৩রা নভেম্বর বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল কানাইঘাট সদরের বীরদল গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে মুনতাহা আক্তার জেরিন। সেদিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল থেকে ছেলে আব্দুর রহিম ও মেয়ে মুনতাহাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন শামীম আহমদ। সেখান থেকে তাদের ফল কিনে দেন। এরপর মুনতাহা শিশুদের সঙ্গে বাড়ির সামনের সড়কে খেলতে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে খাবার খেতে মুনতাহার ডাক পড়ে। খুঁজতে গিয়েও শিশুটিকে আর পাওয়া যায়নি। এরপর ওইদিন রাত ১২টায় মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ কানাইঘাট থানায় একটি জিডি করেন। ফেসবুকে ঝড় তুলে নিষ্পাপ এই শিশুর নিখোঁজের খবরটি। শোবিজের তারকারা পর্যন্ত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মুনতাহার সন্ধান কামনা করেন। তার প্রবাসী ভাই মুনতাহার খোঁজ দিলে আর্থিক পুরস্কার দেবেন বলেও ঘোষণা দেন। কিন্তু মুনতাহা আর জীবিত ফিরে আসেনি। সপ্তাহান্তে মিলে ভয়ঙ্কর খবর। মুনতাহাকে হত্যার পর মরদেহ বাড়ির পাশের একটি খালে কাদামাটিতে চাপা দিয়ে রাখা রেখেছিল ঘাতকরা। ১০ই নভেম্বর ভোররাত ৪টার দিকে মুনতাহার মরদেহ কোলে তুলে পুকুরে ফেলার চেষ্টাকালে স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে আটক করেন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত মার্জিয়া আক্তার, তার মা আলিফজান ও আলিফজানের মা কুতুবজানকে আটক করা হয়। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা মার্জিয়ার বসতঘর গুঁড়িয়ে দেন।

শিশু সন্তানের গলিত নিথর দেহ দেখে শোকে স্তব্ধ হয়ে এলাকার মানুষ। স্থানীয়রা জানান- মুনতাহাকে ২৫০ টাকায় প্রাইভেট পড়াতো মার্জিয়া। তার মা আলিফজান ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। ঘরে তার আশি বছরের বেশি বয়সী নানি কুতুবজান ছিলেন। মার্জিয়া চুরির ঘটনায় এবং তার চলাফেরা খারাপ প্রতীয়মান হওয়াতে টিউশনি থেকে তাকে বাদ দেয় মুনতাহার পরিবার। সেই ক্ষোভে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে মার্জিয়া। জনতার হাতে আটকের পর মার্জিয়ার মা আলিফজান বেগম স্থানীয়দের কাছে বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। সেখানে আলিফজান বলেছিলেন- ‘অপহরণের পর মার্জিয়াকে আটকাতে চেয়েছিলেন। তখন মেয়ে তাকে বলে টাকা ৫ লাখ পাইমু, আমি আরও দুইটা শিশু আনিয়া দিতাম। অপহরণের রাতে শিশুটিকে জীবিত ঘরে নিয়ে আসে। এরপর আবার তাকে নিয়ে যায়। পরে কী করছে জানি না। এই ঘটনায় যাতে নিজে ফেঁসে যেতে পারেন ভেবে ঘরের পাশের খালে কাদামাটি থেকে শিশুটির মরদেহ কোলে করে নিয়ে পুকুরে ফেলার চেষ্টাকালে তিনি ধরা পড়ে যান। এদিকে, মার্জিয়ার নানি কুতুবজান বিবিকে বয়সের বিবেচনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির জিম্মায় দিয়ে দেয়া হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার সকালে কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের ছাউরা গ্রামে ছোটভাইয়ের বাড়িতে মারা যান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff